প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুণ!
দ্বিতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুণ!
তৃতীয় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুণ!
চতুর্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুণ!
পঞ্চম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুণ!
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব নজদী ও তাঁর অনুসারীগণের মাজহাব নিয়ে চিন্তাধারাঃ

বর্তমানে যারা নিজেদেরকে আহলে হাদীস বা সালাফী নামে পরিচয় দেয় এবং মাযহাব মানার বিরোধিতা করে তারা ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনুল কাইয়িম, মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব নজদী প্রমুখের নাম সবচেয়ে বেশি উচ্চারণ করে থাকে। ইতিপূর্বে মাযহাব প্রসঙ্গে এই তিনও ইমামের মত আমরা উল্লেখ করেছি এবং আমরা দেখেছি, তারা সবাই মাযহাবপন্থী ছিলেন, শায়খ আব্দুল ওয়াহহাব নজদীর সন্তান ও জানেশীন (স্থলাভিষিক্ত) একজন আলেম লিখেছেন, ‘আমরা ফিকহী মাসআলায় হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। চার ইমামের কোনো এক ইমামের অনুসারী কারো প্রতি আমরা কটুক্তি করি না এবং আমরা এর বাইরের কোনো মাযহাবও অনুসরণ করতে দিই না। কারণ ওগুলো সংরক্ষিত নেই। আর রাফেজী, যায়দী (শিয়া) ইত্যাদি মাযহাবও ভ্রান্ত। এজন্য এগুলোর উপর আমরা কাউকে থাকতে দিই না। বরং আমরা সকলকে চার মাযহাবের কোনো একটি অনুসরণ করতে বাধ্য করি। (আদ দুরারুস সানিয়্যাহ ১/১৭৭)
প্রশ্ন হলো, যারা তাকলীদকে হারাম শিরক ইত্যাদি বলতে দ্বিধা করেন না, তারা কি এই কথা শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব নজদী, ইবনে উছাইমীন, সালেহ আল ফাউযান সম্পর্কেও বলতে পারবেন? উম্মতের সকল আলেম-উলামা ও মুহাদ্দিসের বিরুদ্ধে শিরকের অভিযোগ দায়ের করবেন?
হ্যাঁ, উম্মতের সকল আলেমই তাকলীদ করার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা বজায় রাখার তাকিদ করেছেন, বাড়াবাড়ি অপছন্দ করেছেন। কিন্তু তাকলীদ পরিত্যাগের মতো অবাস্তব আহ্বান কেউ জানাননি। অনেক খুঁজলে হাজার বছরের ইতিহাসে হাতে গণা দুই/চারজন পাওয়া যাবে যারা বিশেষ কোনো মাযহাব অনুসরণ করতেন না। তাদের কর্মপন্থা হাজারো আলেমের মতের বিপরীতে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। সুতরাং সাধারণ মানুষকে তাকলীদ পরিত্যাগের দাওয়াত দেওয়া একটি নতুন অবাঞ্ছিত কাজ, পূর্বকালে যার নজির নেই।
আহলে হাদীস ভায়েরাও তাকলীদ করে!
যার ভিতর বিন্দু পরিমাণ ইনসাফ/নিরপেক্ষতা আছে, সেও স্বীকার করবে যে, আহলে হাদীস আলেমরা তাদের জনসাধারণকে দিয়ে নিজেদের তাকলীদ করায়! মাযহাব তারাও মানে। তাদের নিজেদের মাযহাব হলো আহলে হাদীস মাযহাব বা সালাফী মাযহাব। যার মূল কথা হলো, ‘নিজেদের বুঝ মতো কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণ করা। অন্য মত যতই ভালো হোক তাকে ভুল মনে করা এবং সহ্য না করা।’ যাইহোক, আসলে আহলে হাদীসগণও মাযহাব মানতে বাধ্য। কারণ কোরআন-হাদীস থেকে একজন নিরক্ষর পানবিক্রেতা (লা-মাযহাবী) আহলে হাদীস/সালাফী, কিংবা সাধারণ শিক্ষিত কোনো ব্যক্তি প্রতিদিনের অসংখ্য দ্বীনী মাসআলার একটিও তো নিজে নিজে বের করতে সক্ষম নয়। তবে সে আমল করে কিভাবে? একাধিক সম্ভাবনাপূর্ণ হাদীস যাচাই এবং ইমামগণের মতসমূহ থেকে অগ্রগণ্য মত বাছাই করার সামর্থ্য কি তার আছে? হাদীসের সূত্র সহীহ না যঈফ তা নির্ধরণ করার কি তার পক্ষে সম্ভব? তাহলে সে কোরআন-সুন্নাহর অনুসরণ করে কিভাবে? অর্থাৎ সে তার পছন্দের কোনো সালাফী/আহলে হাদীস আলেমের কথা মতো আমল করে। ঐ মাওলানা হয়তো দয়া করে একটি দলিল বা তার তরজমা বলে দেন। কিন্তু লোকটি নিজে দলিল বুঝে না, কোন মাসআলার জন্য কী ধরনের দলিল প্রয়োজন, কোন কিতাব উদ্ধৃতির উপযুক্ত আর কোন কিতাব উদ্ধৃতি হিসাবে যথেষ্ট নয় কিছুই সে জানে না, তরজমাটা সঠিক কি না তাও বুঝে না! বলুন তাহলে, মাযহাব না মানার কী অর্থ? তাকলীদকে শিরক বলার মানে কী?
চিন্তা করুন পাঠক! পূর্বেকার মহান ইমামগণের সিদ্ধান্ত যা হাজার বছর যাবৎ লাখো আলেম-উলামার যাচাই বাছাইয়ে উত্তীর্ণ, ঈমান-আমল রক্ষার জন্য তাঁদের অনুসরণ নিরাপদ না কি এই যামানার স্বীকৃতিহীন লোকদের কথা শোনা নিরাপদ?
নির্দিষ্ট মাযহাব অনুসরণের একটি রহস্যঃ
সাধারণ মানুষকে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও ভুল বোঝাবুঝি থেকে রক্ষা করার জন্য এক অঞ্চলে এক মাযহাব মতো আমল করা একান্ত কাম্য। দ্বিতীয় কোনো মত সেখানে প্রকাশ না করা একান্ত কর্তব্য। কারণ মানুষ একটি আমলে অভ্যস্ত হয়ে যাবার পর নতুন আমল দেখলে বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। তো সাধারণ মানুষের মাঝে শান্তি-শৃংখলা রক্ষার বড় প্রয়োজন সামনে রেখে ভুল না হওয়ার পরও ভিন্ন মাযহাবের মত প্রকাশ ও প্রচার থেকে বিরত থাকতে হবে। একারণেই উমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. মদিনায় আসলে তথাকার প্রচলিত মাযহাব অনুসারে বিচার করতেন। আবার সিরিয়া গেলে সেখানকার মতানুসারে ফায়সালা করতেন। কিন্তু এক এলাকার মাযহাব অন্য এলাকার লোকদের উপর চাপিয়ে দিতেন না। বিষয়টি নিয়ে ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করে এসেছি। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তি থেকে বাঁচানোর জন্য একটি সাধারণ কাম্য বিষয়ও মুলতবি করে রাখা জরুরি। এখানে সে পসঙ্গে একটি হাদীস উল্লেখ করছি। কুরাইশরা নির্মাণ-সামগ্রীর অপ্রতুলতার কারণে কাবা শরীফকে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নকশা থেকে ছোট করে পুনঃনির্মাণ করেছিলো। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার আয়শা সিদ্দীকা রাজিয়াল্লাহু আনহাকে বললেন, ‘আমার ইচ্ছে হয় কাবা শরীফকে ইবরাহীম আ.-এর নকশা মতো পুনঃনির্মাণ করি। কিন্তু কুরাইশ নওমুসলিমরা বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে বলে আমি তা করছি না।’ (সহীহ বোখারী, ১২৬) এ থেকে বোঝা গেলো, মুসলিম মিল্লাতের বৃহত্তর কল্যাণের স্বার্থে একটি সাধারণ উত্তম কাজও স্থগিত রাখা জরুরি।
চলবে —————————–
৫ম পর্ব কোথায়? মনে হচ্ছে ৬ষষ্ঠ পর্বই ৫ম পর্ব
জ্বি, ভাই! এখন দেখেন ঠিক হয়েছে।
পোস্টের উপরেই দেখেনঃ পঞ্চম পর্বের লিংক দেওয়া হয়েছে।